ইআরডি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী বাড়ছে দেশি-বিদেশি ঋণের ঝুঁকিজুন নাগাদ আয়কর রিটার্ন ৪৫ লাখে উন্নীত হবেউল্কা গেমসের কর ফাঁকির ৫০ কোটি টাকা আদায়ে ব্র্যাক ব্যাংকে এনবিআরবাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেই
No icon

বিদেশে বৈধ বিনিয়োগের অনুমোদন পাওয়া ১৭ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় নাম নেই এস আলম গ্রুপের 

বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের এখন বিদেশে বৈধভাবে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের কেউ কেউ সুযোগটি নিয়ে নিজেদের দেশীয় অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাইছেন। কেউবা কোন দেশে কোন ব্যবসা উপযোগী, অর্থাৎ চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে বিনিয়োগ করছেন। আবার কেউ কেউ ব্যবসার প্রয়োজনে বিদেশে অফিস কিংবা ছোট আকারের কারখানা গড়ে তুলছেন। এখন পর্যন্ত এ রকম ১৭ প্রতিষ্ঠান সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেয়েছে। সম্প্রতি বিদেশে এস আলম গ্রুপের হোটেল ও বাড়ি কেনার তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর অর্থ পাচারের বিষয়টি আবার নতুন করে সামনে এসেছে। কারণ, অনুমোদন পাওয়া ১৭ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় এস আলম গ্রুপের নাম নেই।

 জানা গেছে, অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই ইতিমধ্যে বিদেশে অর্থ পাঠিয়েছে। কেউ কেউ অর্থ পাঠানোর অপেক্ষায় আছে। এ ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন আরও অনেক উদ্যোক্তা। তবে ডলার সংকটের কারণে এখন বিদেশে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এদিকে আগে যাঁরা বিদেশে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের কেউ দেশে মুনাফা আনছেন না। 

সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে অনুমোদন পেয়েছে পাঁচ কোম্পানি। এগুলো হচ্ছে এমবিএম গার্মেন্টস, রেনেটা, প্রাণ ফুডস, নাসা গ্রুপের এজে সুপার গার্মেন্টস ও কলাম্বিয়া গার্মেন্টস। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগের অনুমোদন পেয়েছে আকিজ জুট। এর আগে ২০২০ সাল পর্যন্ত অনুমোদন পায় ১২ প্রতিষ্ঠান মবিল যমুনা বাংলাদেশ, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস ডিবিএল, স্কয়ার ফার্মা, স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং, সার্ভিস ইঞ্জিন, আকিজ জুট, বেক্সিমকো ফার্মা, এসিআই হেলথকেয়ার, বিএসআরএম, সামিট পাওয়ার ও টেকআউট লিমিটেড। অনুমোদন পেলেও সবাই বিদেশে অর্থ নেয়নি বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা যায়, যাঁদের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি হয়, তাঁদের অনেকেই এখন বিদেশে সম্পদ গড়ে তুলতে চান। অনেকে আবার অনুমোদন ছাড়াই বিদেশে অর্থ পাচার করে কোম্পানি খুলে ব্যবসা করছেন, বিপুল সম্পদ গড়ে তুলছেন। এখন তাঁরা বৈধ পথে টাকা নিয়ে বিদেশের ওই সব সম্পদ বৈধ করতে চান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিদেশে অর্থ নেওয়ার সুযোগ নেই। অবশ্য একজন রপ্তানিকারক ব্যবসা বাড়াতে অন্য দেশে লিয়াজোঁ বা সাবসিডিয়ারি অফিস খোলা ও ব্যয় নির্বাহের জন্য বছরে ৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত নিতে পারেন।

সেটা রপ্তানি করা অর্থ থেকে। আর ঋণপত্র (এলসি) খুলে যেকোনো পরিমাণে বৈধ পণ্য আমদানি ও ভ্রমণ কোটায় বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার খরচ করা যায়। এ ছাড়া শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সুনির্দিষ্ট কয়েকটি খাতে বৈধ উপায়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নেওয়ার সুযোগ আছে। ২০১২ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের আবেদন জানালেও তা নাকচ করে দেওয়া হয়। ২০১৩ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় অনুমোদন দিতে শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে মবিল যমুনা মিয়ানমারে ৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার ও সিঙ্গাপুরে ১ লাখ মার্কিন ডলার; ডিবিএল গ্রুপ ইথিওপিয়ায় ৯৫ লাখ ডলার; স্কয়ার ফার্মা কেনিয়ায় ১ কোটি ডলার; আকিজ জুট মালয়েশিয়ায় ২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। বেক্সিমকো ফার্মা বিনিয়োগের জন্য সৌদি আরবের জুবাইল ফার্মা (সাবেক বেক্সিমকো ফার্মা সৌদি আরব), মালয়েশিয়ার বায়োকেয়ার ম্যানুফ্যাকচারিং ও শ্রীলঙ্কায় ফার্মা সিলন নামে নতুন কোম্পানি খুলেছে। তবে বিনিয়োগের অনুমোদন পেলেও এখনো কোনো অর্থ নেয়নি তারা। ওষুধের ব্যবসায় ৬০ লাখ ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন পেয়েছিল বেক্সিমকো। বিএসআরএম কেনিয়ায় ৪৬ লাখ ডলার নেওয়ার অনুমোদন পেলেও নিয়েছে ২৭ হাজার ২০০ ডলার।

এ ছাড়া প্রাণ ফুডস ভারতের পিনাকল ফোরএস কোম্পানিতে ২০ লাখ ৬২ হাজার ৬৬৫ ডলার বিনিয়োগ করবে। তারা বিনিয়োগ করছে খাদ্য উৎপাদন কারখানায়। নাসা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এজে সুপার গার্মেন্টস সৌদি আরবে সিটি অব ড্রিমস ফর ডেটস কোম্পানির খেজুরের ব্যবসায় ৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগের অনুমতি নিয়ে কিছু অংশ নিয়ে গেছে।

ইনসেপ্টা ফার্মা ১ লাখ ডলার বিনিয়োগ করবে ইনসেপ্‌টা ফার্মা ইউএসএতে। এ ছাড়া এমবিএম গার্মেন্টস এমবিএম সিঙ্গাপুরে ও রেনেটা ফার্মা আয়ারল্যান্ডের রেনেটা ফার্মায় এক লাখ ডলার করে বিনিয়োগের অনুমতি নিয়েছে। এদিকে বিদেশে বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা নাকি লোকসান হচ্ছে, সেই তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের ওপর নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির কোনো তদারকিও নেই।